কবুতরের খাবার ( সংগ্রহ )



কবুতরের ভালো মন্দ নির্ভর করে কবুতরের খাবারের উপর ৷ অনেকেই মনে করেন, কবুতরের জন্য ভালো মানের খাবারের দরকার নাই ৷ কবুতরের রোগ প্রতিরোধ, ডিম দেয়া, বাচ্চা ফোটানো নির্ভর করে খাবারের উপর ৷ শখ করে পালেন আর ব্যবসায়িকভাবে, কবুতরকে অবশ্যই ভালো মানের এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার দিতে হবে ৷ শুধু গম আর ধানের উপর নির্ভর করলে চলবে না ৷
.
১ . কবুতর গম,
২ .ভুট্টা,
৩ .সরিষা,
৪ .চাউল,
৫ .কাউন,
৬ .সবুজ মটর,
৭ .বাজরা,
৮ .খেশারী,
৯ .মসুর কলাই,
১০ চিনা,
১১ .তৃষি,
১২ .ডাবলি,
১৩ .সূর্যমূখীর বীচ,
১৪ .কুসুম ফুলের বীজ,
১৫ .বাদাম,
 ইত্যাদিসহ সব ধরনের শস্যদানা খায় ৷ সব কবুতর উল্লেখিত সবগুলো খাবার নাও খেতে পারে ৷ শর্করা সমৃদ্ধ খাবার (গম, ভূট্টা, সবুজ মটর, বাজরা, চাউল) বেশি (৮০%) এবং তেলবীজ (সরিষা, সূর্যমুখী ও কুসুম ফুলের বীজ) কম (২০%) দিতে হবে ৷ গরমে তেলবীজ কম দিতে হবে ৷
.
১• অনেকেই কবুতরকে রেজা খাওয়ান ৷ এতে কোন খাদ্যগুন নাই ৷ এ ছাড়া এতে রোগের জীবানু বহন করে ৷ তাই কবুতরের খাদ্য তালিকায় রেজা রাখবেন না ৷
.
২ • কবুতরের খাবার কিনে এনে ভালভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে খাওয়াতে হবে ৷ খাবার পরিষ্কার না হলে, কবুতরের হজমে সম্যসা হবে, পায়খানা খারাপ হবে, কম খাবে, বমি হতে পারে, কবুতরের ওজন কমে যাবে, কবুতর ডিম দেবে না, দিলেও ছোট ডিম দেবে, ডিম জমবে না ৷ এমনকি কবুতর মারাও যেতে পারে ৷ বাজারে যেভাবে শস্যদানা বা কবুতরের খাবার সংরক্ষণ করা হয় তাতে এগুলোতে জীবাণু জন্মে ৷ পরিষ্কার না করলে কবুতর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে ৷ এছাড়া শস্যদানা সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা কবুতরের জন্য ক্ষতিকর ৷ সবচেয়ে ভাল হয়, খাবার ধুয়ে শুকিয়ে খাওয়ানো ৷ রোদ না থাকলে হালকা গরম করে খাওয়ানো উচিত ৷
.
3 • সোহেল রাব্বি ভাই বলেছেন, "কেউ যদি সরাসরি ভাঙ্গা ভুট্টা কবুতরকে খাওয়ান , তাহলে বলব সেই কবুতর পালক তৈলাক্ত বাসে উঠার চেষ্টা করছেন, তিনি এক ফুট উঠলে ২ ফুট নেমে যাচ্ছেন। ভাঙ্গা ভুট্টাতে অনেক রোগ জীবাণু থাকে, আপনি যদি এটাকে সেদ্ধ করে না খাওয়ান তাহলে আপনার কবুতর সাল্মনেলিসিস, রক্ত আমাশয়ের মত মারাত্মক রোগে ভুগবে । সেদ্ধ না করলেও অবশ্যই রোদে শুকিয়ে খাওয়াতে হবে" ৷
.
4 • একটা সাধারণ সাইজের (৪৫০ গ্রাম ওজনের) কবুতর প্রতিবার গড়ে ৩০ গ্রাম খাবার খায় ৷ সাইজ বড় হলে বেশি খায় ৷
.
5 • দিনে কমপক্ষে দুইবার খাবার দিতে হবে ৷ খাবার পাত্র ভরে না দিয়ে যতটুকু খাবে ততটুকুই দেয়া উচিত ৷ বেশি দিলে খাবার নষ্ট করবে ৷ যারা কবুতর উড়াতে চান,তারা অবশ্যই বেশি খাবার দেবেন না ৷
.
6 • কবুতর গড়ে ৪৫ মিলি পানি পান করে ৷ গরমের সময় এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয় ৷ পানিও একসাথে বেশি দেবেন না ৷ পানির সাথে ঔষুধ মেশাতে হয়, যার সাথে খরচের সম্পর্ক আছে ৷
.
7 • কবুতরের খাবার ও পানির পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে ৷ সকালে পানি দেবার পর দুপুরে ফেলে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে ৷ পানির পাত্র পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, পাত্রের ভিতর যেন মিউক্যাস না থাকে ৷ এটা সালমোনেলার কারন ৷
.
8 • অনেকে কবুতর মোটা করার জন্য ব্রয়লার গ্রোয়ার খাওয়ান ৷ ব্রয়লার গ্রোয়ার হাসমুরগির জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি ৷ জেনে রাখুন হাস মুরগি যা হজম করতে পারে, কবুতর তা করতে পারে না ৷ ব্রয়লার গ্রোয়ার সাধারণত অনেক দিন পরে থাকে ৷ তাই এতে ফাঙ্গাস হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না ৷
শস্যদানা খাওয়ালে কবুতরের পায়খানা নাপাক হয় না কিন্তু ব্রয়লার গ্রোয়ার খাওয়ালে পায়খানা নাপাক হয়ে যায় ৷ আমার মত যারা কবুতরের পায়খানা পাক রাখতে চান তারা এই তথ্যটি বিবেচনায় রাখবেন ৷ ছেড়ে পালা কবুতর কখনও কখনও আমাদের ঘাড়ে এসে বসে, আবার শুকাতে দেয়া কাপড়ের উপরেও বসে ৷ এতে পোশাক নাপাক হয়ে যায় ৷ মুসলিমদের অবশ্যই এ ব্যাপারটি মাথায় রাখা উচিত ৷
.
9 • কবুতর পোকা মাকড় খেতে চাইলে আমরা বাধা দেই না ৷ পাখিরা সাধারণত পোকা মাকড় খায় ৷ অনেক পাখির তো মূল খাবারই পোকা মাকড় ৷ কবুতরের পিত্ত থলি না থাকায় কবুতর সব কিছু হজম করতে পারে না, তাদের মধ্যে পোকা মাকড় অন্তর্ভুক্ত ৷ তাই পোকা মাকড় অন্যান্য পাখিই খাক, কবুতর না ৷
.
10 • অনেকেই মনে করেন, কবুতরকে গ্রিট দিতে হয় না ৷ এটা ভুল ৷ অনেকে গ্রিট না দিয়ে ডিমের খোসা, ইটের গুড়া, ঝিনুক গুড়া দিয়ে থাকেন ৷ গ্রিটে এ তিনটি উপাদান থাকে, তবে শুধু এ তিনটি উপাদানই যথেষ্ঠ না ৷
সপ্তাহে অন্তত দুই দিন গ্রিট দিতে হবে ৷ অনেকে আবার মনে করেন, গ্রিট কবুতরের ডিমের খোসা শক্ত করে, ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে ৷ গ্রিট ক্যালসিয়ামের অভাব কিছুটা পূরণ করে বটে ৷ গ্রিট মূলত খাবার হজমে সাহায্য করে, খনিজ লবনের অভাব পূরণ করে ৷ গ্রিটে ৩ প্রকারের লবণ থাকে, যা কবুতরের লবণের অভাব দূর করে এবং বাচ্চাকে বাড়তে সাহায্য করে ৷ গ্রিট কিনতে অথবা নিজে তৈরি করতে পারেন ৷ গ্রিট তৈরির রেসিপি পরবর্তীতে জানানো হবে ইনশা আল্লাহ ৷
.
11 • মাঝে মাঝে কালজিরা, মেথি, মৌরি, জাউন (৪০% + ৩০% + ১৫% + ১৫%) মিশিয়ে সরবরাহ করতে পারেন ৷ সব জাতের কবুতর এই মিশ্রণের সবগুলো খায় না ৷ তাই গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন অথবা হাতে ধরে ৷
.
12 • মধু, রসুন, লেবুর রস, কাঁচা হলুদ, অ্যালোভেরা, কাঁচা শাক-সবজি, এগুলো কবুতরকে সজিব রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিম পাতা, মটর শুটি, অঙ্কুরিত ছোলা বুট কবুতরের জন্য উপকারী ৷ শাক সবজি ছোট ছোট করে কেটে দিতে পারেন আবার ব্লেন্ড করে ছেঁকে রস পানিতে মিশিয়ে দিতে পারেন ৷
.
13 • আপেল, কমলা লেবু, ব্রোকোলি, চেরি, কলা, খেজুর, আঙ্গুর, স্ট্রবেরি, মিষ্টি আলু ছোট ছোট করে কেটে অথবা জুস বানিয়ে দিতে পারেন ৷
.
14 • কবুতরকে সপ্তাহে ১ দিন এক বেলা উপবাসে রাখা উচিত, অন্তত মাসে ১ বার । এতে কবুতরের কর্পে সঞ্চিত খাদ্য হজম হয় ৷ ফলে বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকে ।

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post