শীতে ঠান্ডা প্রতিরোধের জন্য কবুতরসহ সকল পাখিদের নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে ৷ পাখির পালক পাখিকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে ৷ তাপ যেন শরীর থেকে বের হয়ে না যায়, এজন্য পাখির পায়ে বিশেষ ধরনের আইশ আছে ৷ এছাড়া পাখি নিজের দেহে চর্বি সঞ্চয় করে রাখে ৷ অতিরিক্ত ঠান্ডায় পাখি লোম ফুলিয়ে রাখে ৷ এটা জ্যাকেটের মত কাজ কাজে ৷ তাপমাত্রা বাড়ার পরও যদি লোম ফুলিয়ে ঝিমায়, তবে তা অসুস্থতার লক্ষণ ৷
.
• শীতের মৌসুমে সব চেয়ে জরুরি, কবুতরের গায়ে যেন ঠান্ডা বাতাস না লাগে সে ব্যবস্থা করা ৷ বেশি ঠান্ডায় ঘর গরম রাখতে হবে, ১৩° সেলসিয়াস সহ্য করতে পারলেও ২০° সেলসিয়াস রাখা সব চেয়ে নিরাপদ ৷ ১৫/১৬ হলেও চলবে, তবে কবুতরের গায়ে সরাসরি বাতাস লাগা যাবে না ৷ একদম বাচ্চা কবুতরের শরীরের সরাসরি বাতাস লাগলে বাচ্চা মারা যাবে ৷ বাল্ব জ্বালালে কবুতরের ঘুমের সম্যসা হতে পারে, বাল্বের আলোও কবুতরের জন্য ক্ষতিকর ৷ ভুলেও কেরোসিনের রুম হিটার ব্যবহার করতে যাবেন না ৷ ধোঁয়া হয় এমন হিটার ব্যবহার করা উচিত না ৷ কবুতরের শ্বাসতন্ত্র খুব নাজুক, ধোঁয়ায় সম্যসা হয় ৷ আর কেরোসিনের ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে ফেলে ৷ তখন কবুতর মরতে অন্য কোন রোগ লাগবে না ৷
.
• কৃত্রিম আলোতে কবুতর কম বয়সেই যৌন পরিপক্কতা পায় ৷ যা কবুতরের জন্য ভাল ব্যাপার না ৷ আবার কৃত্রিম আলোর ফলে কবুতরের বদ অভ্যাস হতে পারে ৷ কবুতর অন্ধকারে বিশ্রাম নেয়, রাতে আলো থাকলে বিশ্রামে সম্যসা হয় ৷
.
• রুম হিটার ব্যবহার করতে চাইলে বেশি মাত্রায় এবং দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার না করা ভাল ৷ আর খুব বেশী ঠান্ডা না পড়লে , কবুতর লোম ফুলিয়ে ঝিম মেরে না থাকলে, লোমহীন বাচ্চা কবুতর কাপাকাপি না করলে, রুম হিটার ব্যবহার না করাই ভাল ৷ কেননা রুম হিটার ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিক আছে ৷ যা মানুষ এবং পশুপাখি সবার জন্যই ক্ষতিকর ৷
শীতের সময় তো এমনিতেই আর্দ্রতা কম থাকে ৷ রুম হিটার ব্যবহারের ফলে আর্দ্রতা আরও কমে যায় ৷ এতে কবুতরের শ্বাসতন্ত্রে সম্যসা হয় ৷ রুম হিটার ব্যবহার করলে আর্দ্রতার জন্য রুমের এক কোনায় গরম পানি রাখতে হবে ৷ রুম হিটারের আরেকটি সম্যসা হল, কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হয় ৷ কার্বন মনোক্সাইড ক্ষতিকর তা তো বলার দরকার নাই ৷ কার্বন মনোক্সাইড যেন ঘরে আটকে না থাকে সে জন্য, যেদিক দিয়ে বাতাস আসার সম্ভবনা নাই বা কম আসবে সেদিকে খোলা রাখতে হবে ৷
.
• ঘরের দেয়াল ঘেষে খাঁচা না রেখে দেয়াল থেকে হাত দুয়েক দূরে খাঁচা রাখতে পারলে ভাল ৷ আর দেয়াল থেকে দূরে খাঁচা রাখার উপায় না থাকলে, বেশি ঠান্ডা পরলে দেয়ালের দিকে মোটা কাপড়, তেরপল বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখাই সবচেয়ে নিরাপদ ৷ যদি ঘরের উষ্ণতা বাড়ান, তবে থাকুক না খাঁচা দেয়াল ঘেষে ৷ খাঁচা মুড়িয়ে দেবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না ৷
.
• ঘরের সব ফাক ফোকর বন্ধ করতে যাবেন না ৷ অ্যামোনিয়া গ্যাস বের হবার এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশের পথ খোলা রাখা চাই ৷
.
• বাহ্যিকভাবে গরমের ব্যাপার তো গেল ৷ অভ্যন্তরীণ গরমের জন্য কবুতরের খাবারে তেল জাতীয় বীজ সরিষা, তিল, সূর্যমুখীর বীজ, ক্যানারির পরিমাণ বাড়িয়ে দিন ৷
.
• ঠান্ডার সময় গরম চা কিন্তু মন্দ না ৷ ১০/১২ টি তুলসি পাতা ভাল করে ধুয়ে ১ কাপ পানিতে মিনিট দুয়েক ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত পানিতে চা চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ আদা কুঁচি দিয়ে এক মিনিট পর নামিয়ে নিন ৷ এই মিশ্রণ ঠান্ডা হবার পর চা চামচোর অর্ধেক চামচ মধু দিয়ে এক লিটার পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে কবুতরকে খেতে দিন ৷ এই মিশ্রণ ৫/৬ ঘন্টার বেশী রাখবেন না ৷ সপ্তাহে দুই দিনের বেশী এই মিশ্রণ না দেয়াই ভাল ৷ মাঝে মাঝে চা পাতা ছাড়া শুধু তুলসির চা, পুদিনার চা, আদার চা খাওয়ান ৷ বাজারে ভেষজ চা (চা পাতা+পুদিনা+তুলসি+নিম) পাওয়া যায় ৷ সেটিও দিতে পারেন ৷ মধু না দিলে চাটা একটু গরম থাক ৷ হাজার হোক চা বলে কথা, একটু গরম না হলে কি চলে?
.
• সব গরম দিয়ে পানি ঠান্ডা দিলে কি হবে? হবে না ৷ কবুতর যেন ঠান্ডা পানি না খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ৷ ঠান্ডা পানি গরম করে দিতে হবে ৷ সাধারণ পানি একটু গরম হলে সম্যসা নাই, তবে ঔষুধ মেশানোর জন্য পানি কিন্তু গরম হলে চলবে না ৷ পানি গরম করে ঠান্ডা হবার পর ঔষুধ মিশিয়ে দিতে হবে ৷
.
• আদার রস (১ লিটার পানিতে ৫ মিলি), মধু (১ লিটার পানিতে ১০ মিলি) দিতে পারেন ৷ মধু মাসে ৫ দিনের বেশি দেবেন না ৷
.
• রোগ প্রতিরোধে অন্যতম কাজ হল, কবুতরের বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং জীবানুমুক্ত রাখা ৷ তাই বাসস্থান পরিষ্কার রাখুন ৷ জীবানুমুক্ত রাখতে জীবানুনাশক স্প্রে করুন ৷ রোদ না উঠলে স্প্রে করলে স্যাতস্যাতে থাকে, যা আবার কবুতরের জন্য ক্ষতিকর ৷ রোদ না উঠতে স্প্রে বাদ দিয়ে বোড়িক পাউডার ছিটানোই উত্তম ৷
.
• বাসস্থান ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করলে পাতলা পায়খানা হওয়া স্বাভাবিক ৷ খাঁচার কবুতরকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও, ছেড়ে পালা কবুতরকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ না ৷ আর আমার কবুতরের মত ঘর থেকে বাইরে থাকতেই যাদের কবুতর পছন্দ করে, তাদের কবুতরের এক আধটু ঠান্ডা, পাতলা পায়খানা হতেই পারে ৷ এতে ভয়ের কিছু নাই ৷ পাতলা পায়খানা হলে সব কবুতরকে D-STOP (প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি) দিতে পারেন ৷ দিতেই হবে এমন কিন্তু না ৷ সব কবুতরকে খাওয়াতে চাইলে D-STOPই খাওয়ানো উত্তম ৷ কবুতর যদি রাতে লোম ফুলিয়ে থাকে এবং দিনে লোম ফুলিয়ে না থাকে, তবে ঠান্ডার ঔষুধ খাওয়ানোর দরকার নাই ৷ আর যদি দিনে রাতে সব সময়ই লোম ফুলিয়ে থাকে বা ঝিমায়, তবে দেখুন তো ঠান্ডা বা অন্য কোন সম্যসা হল কি না ৷
.
• ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে মাসিক ছকে KC যোগ করুন ৷ প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি, পর পর ৩ দিন ৷
.
• ঠান্ডায় আমার যেমন খেতে ইচ্ছে করে না, তেমনি কবুতরেরও খেতে ইচ্ছে করে না ৷ আসলে পরিবর্তিত আবহাওয়ায় বিশেষ করে ঠান্ডায় প্রায় সব প্রাণীরই খাবারের প্রতি আগ্রহ কম থাকে ৷ এটা স্বাভাবিক ব্যাপার ৷ তাই চিন্তিত হবার কিছু নাই, কোন ঔষুধও দেবার দরকার নাই ৷ মন না মানলে আমলকির রস খাওয়াতে পারেন ৷ হার্বাল, ইউনানী সব অবস্থাতেই নিরাপদ ৷
.
• শীতের মৌসুমে ভিটামিনের (2B, 3vit, HOO, PHT) পরিমাণ খানিকটা বাড়াতে পারেন ৷
.
• ৪৫ দিন পর পর কৃমিনাশক দিন ৷
.
• ঠান্ডা বলেই কবুতরকে গোসল করানো থেকে বিরত রাখবেন না ৷ রোদেলা দিন দেখে গোসলের ব্যবস্থা করে দিন ৷ প্রতি সপ্তাহে একবার না হলেও, প্রতি ১৫ দিনে এক বার ৷
.
• ঠান্ডার সময়ে যে রোগগুলো বেশি হয়, সেসব রোগের চিকিৎসার ঔষুধগুলো সংগ্রহে রাখুন ৷ হামদর্দের ডিসনি (পেচিস), চালের স্যালাইন সংগ্রহে রাখুন ৷
.
• এ সময় হাটে প্রচুর অসুস্থ কবুতর থাকে, তাই এ সময় কবুতর কিনতে সতর্ক থাকতে হবে ৷
.
আজকে এখানেই শেষ ৷
Post a Comment