ধান, বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিভিন্ন রোগের কারণে ধানের উৎপাদন কমে যায় এবং মানও নষ্ট হয়ে যায়। আসুন জেনে নিই ধানের কিছু প্রধান রোগ ও তার কারণ:
১. ব্লাস্ট
রোগ:
- কারণ: এই রোগের
জন্য একটি
ছত্রাক দায়ী।
- লক্ষণ: পাতা, কাণ্ড
ও শীষে
ছোট ছোট
কালো দাগ
দেখা যায়।
ধীরে ধীরে
দাগগুলো বড়
হয়ে পুরো
অংশ নষ্ট
করে দেয়।
- ক্ষতি: ফলন কমে
যায় এবং
ধানের গুণগত
মান নষ্ট
হয়।
২. বাদামী
দাগ রোগ:
- কারণ: এই রোগের
জন্যও একটি
ছত্রাক দায়ী।
- লক্ষণ: পাতায় বাদামী
রঙের দাগ
দেখা যায়।
ধীরে ধীরে
দাগগুলো বড়
হয়ে পুরো
পাতা নষ্ট
করে দেয়।
- ক্ষতি: ফলন কমে
যায় এবং
ধানের দানা
ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. পাতা
পোড়া রোগ:
- কারণ: এই রোগের
জন্য একটি
ব্যাকটেরিয়া দায়ী।
- লক্ষণ: পাতায় দীর্ঘাাকার
পানির ছিটা
মতো দাগ
দেখা যায়।
ধীরে ধীরে
দাগগুলো বড়
হয়ে পুরো
পাতা নষ্ট
করে দেয়।
- ক্ষতি: ফলন কমে
যায় এবং
ধানের গুণগত
মান নষ্ট
হয়।
৪. টুংরো
রোগ:
- কারণ: এই রোগের
জন্য একটি
ভাইরাস দায়ী।
- লক্ষণ: পাতা হলুদ
হয়ে যায়,
গাছের বৃদ্ধি
বন্ধ হয়ে
যায় এবং
কুশি কম
হয়।
- ক্ষতি: ফলন কমে যায় এবং ধানের গুণগত মান নষ্ট হয়।
৫. গোলাপী
শীষ রোগ:
- কারণ: এই রোগের
জন্য একটি
ছত্রাক দায়ী।
- লক্ষণ: শীষে গোলাপী
রঙের ছত্রাক
দেখা যায়।
ধীরে ধীরে
শীষ নষ্ট
হয়ে যায়।
- ক্ষতি: ফলন কমে
যায় এবং
ধানের দানা
ক্ষতি গ্রস্ত হয়।
ধানের রোগ
হওয়ার অন্যান্য
কারণ:
- আবহাওয়া: অতিরিক্ত বৃষ্টি,
খরা, উচ্চ
তাপমাত্রা ইত্যাদি।
- পোকা-মাকড়: বিভিন্ন ধরনের
পোকা-মাকড়
ধানের গাছে
আক্রমণ করে।
- সারের অপর্যাপ্ত ব্যবহার: সারের অভাব
বা অতিরিক্ত
ব্যবহারে রোগের
প্রাদুর্ভাব বাড়তে
পারে।
- জমির উর্বরতা কম হওয়া: জমির উর্বরতা
কম থাকলে
ধানের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা
কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধের
উপায়:
- রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ: রোগ প্রতিরোধী
জাতের ধান
চাষ করলে
রোগের প্রাদুর্ভাব
কম হয়।
- সুষম সার ব্যবহার: সুষম মাত্রায়
সার ব্যবহার
করলে ধানের
রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ে।
- পোকা-মাকড় দমন: পোকা-মাকড়
দমন করলে
রোগের বিস্তার
কম হয়।
- জমির উর্বরতা বৃদ্ধি: জমির উর্বরতা
বৃদ্ধি করলে
ধানের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ে।
- আধুনিক কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ: আধুনিক কৃষি
পদ্ধতি অনুসরণ
করলে ধানের
উৎপাদন বাড়ে
এবং রোগের
প্রাদুর্ভাব কম
হয়।
রোগ প্রতিরোধী
জাতের চাষ:
- জাত নির্বাচন: স্থানীয় পরিস্থিতির
জন্য উপযুক্ত
এবং রোগ
প্রতিরোধী জাতের
ধান চাষ
করুন। কৃষি
বিভাগের সাথে
যোগাযোগ করে
সঠিক জাত
নির্বাচন করতে
পারবেন।
- জাতের বীজ ব্যবহার: স্বাস্থ্যকর এবং রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন। বীজ চিকিৎসা করে রোগ জীবাণু ধ্বংস করতে পারেন।
সুষম সার
ব্যবহার:
- মৃত্তিকা পরীক্ষা: জমির মৃত্তিকা
পরীক্ষা করে
সারের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করুন।
- ব্যালান্সড সার: নাইট্রোজেন, ফসফরাস
এবং পটাসিয়ামের
সুষম মাত্রায়
সার ব্যবহার
করুন।
- জৈব সার ব্যবহার: জৈব সার
যেমন গোবর,
খৈল ইত্যাদি
ব্যবহার করলে
জমির উর্বরতা
বাড়বে এবং
রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি
পাবে।
- সার প্রয়োগ পদ্ধতি: সার প্রয়োগের
সঠিক পদ্ধতি
অনুসরণ করুন।
অতিরিক্ত সার
প্রয়োগ রোগের
প্রাদুর্ভাব বাড়াতে
পারে।
পোকা-মাকড়
দমন:
- পোকা-মাকড় পর্যবেক্ষণ: ধানের গাছে
পোকা-মাকড়ের
উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ
করুন।
- জৈব পোকা দমন: জৈব পোকা
দমন পদ্ধতি
যেমন পতঙ্গভুক
প্রাণী ব্যবহার,
ফেরোমোন ট্র্যাপ
ইত্যাদি ব্যবহার
করুন।
- রাসায়নিক পোকা দমন: শুধুমাত্র যখন
প্রয়োজন হয়
তখনই রাসায়নিক
পোকা দমন
পদ্ধতি ব্যবহার
করুন এবং
নির্দেশিত মাত্রায়
ব্যবহার করুন।
জমির উর্বরতা
বৃদ্ধি:
- ফসল পরিবর্তন: ধানের পরে
অন্য ফসল
চাষ করুন
যাতে জমির
উর্বরতা বৃদ্ধি
পায়।
- জমি চাষ: জমি ভালোভাবে
চাষ করে
জমির উর্বরতা
বাড়ান।
- জমি ঢেকে রাখা: জমি ঢেকে
রাখলে মাটির
আর্দ্রতা ধরে
রাখা যায়
এবং জমির
উর্বরতা বৃদ্ধি
পায়।
আধুনিক কৃষি
পদ্ধতি অনুসরণ:
- কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার: আধুনিক কৃষি
প্রযুক্তি যেমন
স্মার্ট কৃষি,
ড্রোন ব্যবহার
ইত্যাদি ব্যবহার
করুন।
- কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: কৃষি বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ অনুসরণ
করে ধান
চাষ করুন।
- জল সেচ ব্যবস্থা: সঠিক জল
সেচ ব্যবস্থা
ব্যবহার করুন
যাতে ধানের
গাছের পানির
প্রয়োজন পূরণ
হয়।
বিঃদ্রঃ: এই তথ্যগুলি ধানের রোগ প্রতিরোধের জন্য সাধারণ নির্দেশনা। স্থানীয় পরিস্থিতি এবং জমির বিশেষত্বের উপর ভিত্তি করে পরামর্শের জন্য কৃষি বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
Post a Comment