কবুতর পালন পদ্ধতি ১ ( সংগ্রহ )




সৌখিনদের সৌখিন কবুতর পালন পদ্ধতি নিয়ে কিছু কথা বলব। কবুতরের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ তা অন্য কিছুতে নাই। এটা মানুষের নেশা, পেশা, সখ ও সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসাবে আজ পরিচিত। কবুতর প্রেমিদের সেই নেশা, পেশা ও ভাললাগার আর একধাপ এগিয়ে নিয়েছে সৌখিন কবুতর (fancy pigeon), এই সৌখিন কবুতর যে কত সুন্দর হতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করা যাই না। আজ ইস্কুলের একজন ছাত্র থেকে শুরু করে অফিস আদালতের কর্মরত, সেনাবাহিনী, জর্জ, উকিল, পুলিশ কমিশনার এর মত সব উচ্চপদের মানুষ আজ এই কবুতর পালন কে সখ, নেশা যেটাই বলা হোক না কেন। আজ সবারই ভাললাগা ও ভালবাসার পাখিতে পরিনত হয়েছে এই কবুতর পালন। আজ সৌখিন কবুতর (fancy pigeon) পালন শুধু সখ বা নেশা না। এটা অনেক বড় পেশাতেও পরিনত হয়েছে। আজকাল অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা এই পেশায় নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে। এই পেশায় সময় দিয়ে অনেক যুবকরা তাদের বাইরের আড্ডা, বা খারাপ সঙ্গ থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারছে। একজন কবুতর খামারি নিজেও বলতে পারবে না যে তাকে খামারে সময় দিতে গিয়ে দিনটা কিভাবে কেটে যায়। অনেক সময় হইত ভেবেই পাওয়া যায় না যে দিনটা এত তারাতারি কিভাবে কাটল, আজ দিনটা কি ছোট নাকি? অনেকে আবেগের তাড়নায় বলে ফেলেন যে, বন্দি বা খাচায় পাখি বা কবুতর পালা উচিৎ না। আর এটা ইসলামে এটা নিষেধ। আসলে এটা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা, যারা এধরনের কথা বলেন তারা না জেনেই বলে থাকেন। আর না জেনে কথা বলাটা মারাত্মক পাপ। রসূল (সঃ) বলেন, “একজন মুসলিম যিনি একটি পোষা প্রাণী রাখতে পছন্দ করে, তার দায়িত্ব হল ভালমত এর যত্ন নেয়া,যথাযথ খাদ্য, পানি এবং আশ্রয়ের ব্যাপারে খেয়াল করা আবশ্যক। কোন ব্যাক্তি যদি একটি পোষা প্রাণীর যত্নর ব্যাপারে উদাসীন বা উপেক্ষিত হয় তার কঠিন শাস্তি বর্ণনা করেছেন।“ সুতরাং কেউ যদি সত্যি সত্যি পাখি, প্রানি বা কবুতর পালতে চান তাহলে তাদের অবশ্যই এসব সর্ত মানতে হবে। যাই হোক যারা আগে থেকেই সৌখিন কবুতর পালেন তাদের ও যারা পালতে চান তারা আজ এই পোস্টটি পরে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন বলে আশা রাখি। আপনি কিভাবে একটি ভাল খামার গঠন করবেন?
 ১) জায়গা নির্বাচনঃ খামারের জায়গা এমন হওয়া উচিৎ, যেখানে পর্যাপ্ত আল বাতাস ও রোদ আসে। অর্থাৎ গরমের সময় বাতাস ও শীতের সময় রোদ দুটোই পাওয়া যায়। গ্রামে যারা থাকেন তাদের এমন ধরনের জায়গা নির্বাচন নিয়ে তেমন বেগ পেতে হয় না। কিন্তু যারা শহরে থাকেন, বিশেষ করে সেটা যদি ভাড়া বাসা হয় তাহলে, তা হয় এক মহা বিপদের মত। আপনি আপনি যদি বাড়ির মালিক হন তাহলে আপনার ছাদে ঘর বানিয়ে,খামার তৈরি করতে পারেন। আর যদি ভাড়া থাকেন, তাহলে মালিকের অনুমতি নিয়ে, একটা ঘর বা বারান্দায় খামারের ব্যাবস্থা করতে পারেন।
২) কিভাবে পালবেনঃ সৌখিন কবুতর দুই ভাবে পালা যায়, ক) ছাড়া অবস্থাই(কলোনি) ও খ) খাঁচার মধ্যে। ছাড়া(কলোনি) অবস্থাই পালতে চাইলে খেয়াল রাখতে হবে যেন মিস ক্রস না হয়, তাহলে জাত নষ্ট হবার ভয় থাকে। তাই আমি খাঁচায় পালন করাটাই বেশি অগ্রাধিকার দিই।
৩) খাচার মাপ/আকার/সাইজঃ খাঁচার আকার বা সাইজ কি হবে তা নির্ভর করে আপনি কি ধরনের কবুতর পালতে চাচ্ছেন তার উপর। যদি আপনি সুধুগিরিবাজ পালতে চান তাহলে। ১৪*১৪*১৬ ইঞ্চি হলে ভাল। আর যদি সৌখিন কবুতর পালতে চান তাহলে সাধারণত আদর্শ মাপ হল। ২৪*২৪*১৮ ইঞ্চি বা ২৪*২৪*২০ ইঞ্চি হলে আর ভাল। তবে খামারে সব খাঁচা একই মাপের হলে ভাল। এতে খামারের জাইগার ব্যাবস্থাপনা করাটা ভাল হয়।
৪) খাঁচা কোথাই পাবেন বা বানাবেন আর এর দামঃ বাজারে বা এলাকায় তৈরি খাঁচা পাওয়া যায়। কিন্তু যা ৪০০-১২০০ টাকার মধ্যে, তবে এসব খাঁচার মান তেমন ভাল থাকে না। তাই ওডারি খাঁচা বা নির্দেশ মোতাবেক খাঁচা বানান ভাল যদিও দামের পার্থক্য খুব বেশি হয় না। কিন্তু ভাল মানের জিনিস পাওয়া যাই। যার রিসেল মূল্য ভাল হবে। যার মূল্য ১১৫ টাকা/কেজি থেকে ১৩০ টাকা/কেজি। দেখে নিবেন যেন খাঁচার তার টা একটু মোটা ও জং ধরা না হয়। ট্রে তা একটু মোটা শিট দিয়ে তৈরি করবেন জাতে সেটা জং ধরার ভয় না থাকে। খাঁচার শিক গুল অনেক সময় জং ধরা থাকে তাই খাঁচা আনার আগে রঙ করিয়ে নিলে আর ভাল হয়। আর অবশ্যই খাঁচা তৈরির পর ভাল করে দেখে নিবেন যেন কোণ গুলো ঠিক মত মেশিন দিয়ে ঘষা হয়েছে তা না হলে আপনার হাত ও কবুতরের পা কাটার ভয় থেকেই যাবে। খাঁচার ফাঁকটা(গ্যাপ) ৪*৪ ইঞ্ছি হয় বা এর কম বেশি করতে পারেন। এতে দুটি উপকার হবে এক আপনার খাঁচার খরচ কমে যাবে ও দুই খাবারের পাত্র খাঁচার বাইরে লাগান যাবে। কারন খাঁচার ভিতরে খাবারের পাত্র থাকলে কবুতর পানি ও খাবারের পাত্রে পায়খানা করতে পারে বা খাবার নষ্ট করার প্রবনতা তৈরি হতে পারে। যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তারা খাঁচা আলাদা ভাবে বানলে ভাল এতে বাসা পরিবর্তন এর সময় খাঁচা নিতে সুবিধা হবে। যদিও এতে একটু খরচ বাড়তে পারে। কিন্তু এতে আপনি বেশি উপকারিত হবেন। আর খাঁচা যখন পরিবহন করবেন কবুতর সহ তখন অবশ্যই খাঁচা ঢেকে নিবেন। এতে কবুতরের ভয় পাবার বা স্ট্রেস হবার ভয় কম থাকে। আর যাদের নিজের বাড়ি তারা ৬ টা বা ৮ তার একটা সেট তৈরি করতে পারেন। তবে খাঁচার নিচের দিকে একটু বেশি গ্যাপ দিবার চেষ্টা করবেন এতে করে আপনার খাঁচার পরিচর্যা করতে সুবিধা হবে।
 ৫) খাবার ও পানির পাত্রঃ খাবার ও পানির পাত্র টিনের না হয়ে প্লাস্টিক এর হলে ভাল হয় যাতে আপনি কিছুদিন পর পর ধুতে পারেন আর এটা জং ধরার ভয়ও থাকবে না। আর পাত্র গুলো একটু বড় ও গভির হলে ভাল কারন তাতে কবুতর খাবার গুলো নষ্ট করবে কম ও ফেলতেও পারবেন না। সবচেয়ে যেটা বেশি দরকার সেটা হল ঔষধ বা সাধারন অসুস্থ কবুতর কে খাওয়ানর জন্য নল লাগান syringe।
৬) ঔষধ ও ভিটামিন মজুতঃ কথাই আছে ঘোড়া কেনার আগে লাগাম কেন গরু কেনার আগে দড়ি। তেমনি কবুতর পালনের আগেই আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও অ্যান্টিবায়টিক এর মজুত এর ব্যাপারে।

প্রয়োজনীয় ঔষধ যেমনঃ 


 Doxivet

ESB30 (অ্যান্টিবায়টিক)

 Cosmix Plus

Electrolyte(saline)

 Biovit/Toxinil(ভিটামিন)

 Powermax Ws(মাল্টি ভিটামিন)

 Calcium Forte(ভিটামিন)

Shafi, Febnil

Cinkara(tonic)

Riboflabin,

Flazil ইত্যাদি।

 এছাড়া হোমিও কিছু ঔষধ যেমনঃ 

Belodona 30,

Borax 30,

Kali curb 30,

Kali Hydro 30 ইত্যাদি ।

জীবাণু নাশক ঔষধ যেমনঃ 

ফার্ম ৩০,

Timson,

Virocid,

Vircon S,

Hexisol hand rub,

Povisep,

Detol,

Antiseptic creme ঔষধ ও মজুত রাখলে ভাল।

1 Comments

  1. সুন্দর লিখছেন!!!ঔষধ গুলা খাওয়ানোর নিয়মগুলা জানালে আর উপকৃত হতাম!!!

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post