কবুতর পালন পদ্ধতি ২ ( সংগ্রহ )



১) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ কিছু জিনিস যা আপনার হাতের কাছে রাখলে ভাল যেমনঃ কাচি, হ্যান্ড গ্লভস(৯০ টাকা), মাস্ক, আলাদা স্যান্ডেল, হ্যান্ড স্প্রে (যার দাম পড়বে অটো ৩ লিটার ১৮০ টাকা, আর বড় অটো ২০ লিটার ৯০০ টাকা।) ছেনি (ময়লা বা পায়খানা পরিস্কার এর জন্য।), এছাড়াও ঔষধ ও ভিটামিন রাখার জন্য ছোট বড় রঙ্গিন বোতলে রাখলে ভাল হয়। এছাড়াও খাবার রাখার জন্য একটা ঢাকনা ওয়ালা বড় পাত্র ও পানির বড় ঢাকনা ওয়ালা পাত্র হলে ভাল হয়, আর পানি পরিবেশনের জন্য একটা জগ ও খাবার দিবার একটা ছোট বাটি বা হাতল ওয়ালা ছেনি। গোসল করানর জন্য একটা টিনের বা প্লাস্টিক বড় টব।

২) কি ধরনের বা জাতের কবুতর পালবেনঃ কবুতর পালনের ৩টি স্তর আছে, যেমন – ক) প্রথম স্তর/ পর্যায় = এই স্তরে একজন নতুন পালক নতুন ভাবে কবুতর অবস্থাই কবুতর পালন শুরু করেন। এই অবস্থাকে কঠিন অবস্থা বলা হয়। কারন এই পর্যায়ে একজন নতুন খামারে বেশি ঠকে থাকেন। এই অবস্থাই যে কবুতর দেখা হয় সেটাই ভাল লাগে। আর তাই ফাটা বেজাতের, মিস ক্রস, যেমন ইচ্ছে তেমন কবুতর সংগ্রহ করে খামার ভরিয়ে তুলেন। যে কবুতরের দাম ৫০০ টাকা তা ১০০০ টাকা দিয়ে এভাবে দুই গুন ৩ গুন দামে কবুতর কেনেন। আর কিছু অসাধু ব্যাবসায়ি ও খামারি এই সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকেন। এই স্তর/ পর্যায় এর পালক অনেক সময় কম দাম এই স্তরের কবুতর পালক তার কেনা সব কবুতরই কিছু দিন পরে হারাতে বসেন। কারন তিনি জেনে না জেনে সুস্থ কবুতর যথাযথ জ্ঞানের অভাবে সাধারন চিকিৎসা দিতে বার্থ হন। ফলে সুস্থ কবুতর অসুস্থ ও পরে অসুস্থ কবুতর মারা যায়। তাই এই স্তরের পালকদের প্রতি আমার অনুরধ থাকবে, আগে কবুতর পালন শিখতে হবে। আর এর জন্য প্রথমে লক্ষা,সিরাজি, হোমার,এই ধরনের কবুতর পালন করে হাত জস/পাকাতে হবে। কারন সৌখিন কবুতর দেশি/গিরিবাজ কবুতরের মত না এগুলোর রোগবালাই একটু বেশিই হয়। খ) দ্বিতীয় স্তর/ পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে একজন খামারি কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে। আর তার ভুলের কারনে নিজের প্রতি ও তাকে যারা ঠকিয়েছে তাদের প্রতি একটু বিরিক্ত বোধ করে। অনেকেই পালন ছেড়েই দেন। আর অনেকেই পুরান ভুল সুধরানর জন্য ফাটা বা বেজাতের কবুতর গুলোকে বিক্রি করেই হোক বা দান করেই হোক বা জবাই করেই হোক খামার থেকে এক প্রকার তরিঘরি করে, আবার নতুন করে তৈরি করার পরিকল্পনা করে থাকে। এই পর্যায়ে এই স্তরের পালক রিং ও আমদানিকৃত কবুতরের প্রতি ঝুকে বেশি। যা তাকে আরেকটি ভুল পথে পা বাড়ায়। আর যেহেতু আগে অনেক দাম দিয়ে ফেলেছেন তাই এই স্তর/ পর্যায় এ কম দামে ভাল কবুতর কিনতে যান। ফলে দ্বিতীয় বারের মত ভুল করে বসেন। আর যেহেতু এই স্তরের খামারি রিং সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আর এই সুযোগে সেই সকল ব্যাবসায়ি ও খামারি নিজের সরবরাহকৃত রিং, সেই অলিক রিং বলে চালিয়ে দেয়। আর আমদানিকৃত কবুতর কিনে ১ বছরেও ডিম না পেয়ে হতাশায় ডুবে যান। তখন খামার করবে না ছাড়বেন, এই ধরের দোটানায় থাকেন। আমার এই পর্যায়ের খামারির প্রতি অনুরোধ, রিং বা আমদানিকৃত কবুতরের পিছনে না ছুটে। ভাল মারকিং, ও জাতের কবুতর সংগ্রহ করুন। দাম যাচাই করে। এই স্তরের খামারি যেহেতু কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে তাই তাদের একটু ভাল জাতের ও দামের কবুতর পালনে যেতে পারেন। যেমনঃ পটার, স্ত্রেসার, কিং, জ্যাকবিন, বিউটি হুমার, হলুদ লক্ষা, হেলমেট, নান ইত্যাদি। গ) তৃতীয় স্তর/ পর্যায়ঃ এই স্তর/ পর্যায় এর খামারি অনেক কাঠ খড় পুরিয়ে, রোদেজলে থেকে, অনেক ঠক খেয়ে,অনেক ভালবাসার ও পছন্দের কবুতর হারিয়ে। খাঁটি খামারি হয়ে যান। আর এই পর্যায়ের খামারি চিনতে শিখেন সেই সব কবুতর ব্যাবসাই ও ঠকবাজদের। আর চিনতে শিখেন আসল রিং আর কোনটা নকল। কোনটা আমদানিকৃত আর কোনটা লোকাল। তিনি জানতে শিখেন আমদানিকৃত কবুতর কিনে কি করতে হবে। আর এই পর্যায়ের কবুতের পালক বা খামারি দের আমার কোন উপদেশ নেয় কারন তারা যদি একটু নিজের বিচার বুদ্ধি খাটায় তাহলেই তারা একজন সফল খামারি হতে পারবেন। আপনি যে স্তরের খামারি হন না কেন অল্প পালেন কিন্তু ভাল জাতের কবুতর পালেন।
৩) ফসটার কবুতর তৈরিঃ কিছু কবুতর আছে যারা নিজেদের ডিম বা বাচ্চা নিজেরাই করে আর কিছু দামি কবুতর তারা এটা করতে পারে না। তাদের দেহের গঠন এর কারনেই হোক বা অন্য কারনেই হোক, এসব কবুতরের ডিম তা দিবার জন্য বা বাচ্চা তুলা ও বাচ্চা পালনের জন্য কিছু শক্ত সামর্থ্য কবুতর রাখতে হয়। আর এটা করতে হয়। এক জোড়ার জন্য দুই জোড়া ফসটার। যেমনঃ পটার, স্ত্রেসার,কিং,জ্যাকবিন ইত্যাদি ডিম ফস্তারিং করলে ভাল। এক্ষেত্রে ডিম দিবার ও চালার তারিখ মনে রাখতে বা লিখে রাখতে হবে। আর এর পার্থক্য ২-৩ দিনের ব্যাবধানের বেশি যেন না হয়।
৪) কবুতরের খাবারঃ কবুতরের খাবার একজন খামারির জন্য অন্যতম উপাদান। একজন খামারি কি খাবার দিবেন বা একজন খামারি কিভাবে খাবার সংরক্ষণ করবেন তার উপর তার সফলতা ও বার্থতা নির্ভর করে থাকে। কারন কবুতরের অধিকাংশ রোগ ও ব্রিডিং ক্ষমতা এই খাবারের উপরি নির্ভর করে। একজন খামারি শুধু গম বা ধান দিয়ে তার দায়িত্ব সারতে পারবে না। অনেকেই আছেন যে ব্যাবসার চিন্তা মাথাই থাকে বলে, খাবারের পিছনে বেশি খরচ করতে চান না। যাতে তার ব্যাবসার ক্ষতি না হয়। কিন্তু ব্রিডিং কম ও ডিম না ফুটা বা বাচ্চা ভাল মত না হবার কারনে যে তার কত ক্ষতি হচ্ছে তিনি সেটা মনে রাখেন না। আপনি আপনার কবুতর কে কি ধরনের খাবার দিবেন তা খাবারের পোস্ট এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে একটু দেখে নিবেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন অলসতা করে বা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে সাধারন মিক্স খাবার বেশি দামে কিনবেন না। আপনার খাবার আপনি নিজেই কিনুন। এতে আপনার খরচ বাচবে ও অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হবে। আর খাবার কখন দিবেন কিভাবে দিবেন এটা আপনার উপর নির্ভর করে। তবে খাবার দিনে ২ বার দিবেন ও তুলে নিবেন পানি যেন সব সময় থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। আর পানি যদি নষ্ট করে তাহলে তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করে ফেলবেন। তবে যে কবুতর ডিম পেড়েছে, বা বাচ্চা আছে, বা তাদের খাবার সব সময় রাখা ভাল এতে বাচ্চার আকার বড় হয়। আর এই অবস্থায় গ্রিট এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর খাবারের ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন যেন ডাবলির পরিমান বেশি থাকে কারন এটা কবুতরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার।
৫) গ্রিটঃ গ্রিট কবুতর ও ঘুঘুর জন্য অন্যতম একটি খাদ্য উপাদানের মত। যদিও পাখিদের গ্রিট দিয়া হয়। যা কবুতরের গ্রিট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। গ্রিট মূলত কবুতরের খাদ্য ও বীজ হজমে বিশেষ ভুমিকা রাখে। যদিও অনেকেই মনে করেন যে গ্রিট ডিমের খোসা শক্ত করে ক্যালসিয়াম এর অভাব পুরন করে ইত্যাদি। কিন্তু এই ধারনা একেবারেই ভুল। গ্রিট ক্যালসিয়াম এর কিছুটা অভাব পুরন করে, ঝিনুক শেল,সমুদ্রের ফেনা ইত্যাদির কারনে, কিন্তু এর উদ্দেশ্য এটা না। গ্রিট এর ব্যাপারে একটা বিষয় খুবই খেয়াল রাখতে হবে যে, তৈরি গ্রিট যেখান থেকেই কিনুন না কেন, খেয়াল রাখবেন যেন শামুকের শেল না থাকে। এটা কবুতরের অনেক ক্ষতি করে থাকে। অনেকের ধারনা বাজারে যে গ্রিট কিনতে পাওয়া যায় তা ভাল না। অথচ যারা নতুন কবুতর পালে তাদের প্রথম এই গ্রিট দিয়েই শুরু করে। অনেকেই ব্যাবসায়িক চিন্তা থেকে বলে থাকেন যে বাইরের গ্রিট দিবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমি বলি বাইরের গ্রিট যদি আপনি গরম করে আপনার কবুতর কে সরবরাহ করেন তাহলে আপনার ভয়ের কোন কারন নাই। তবে আপনি নিজে গ্রিট তৈরি করতে পারলে ভাল। গ্রিট তৈরির পদ্ধতি নিয়ে একটা পোস্ট আছে। অনুগ্রহ করে দেখে নিবেন।
৬) কবুতরের রোগ ব্যাধিঃ কবুতরের যত ধরনের রোগ আছে সেগুল নিয়ে অনেক পোস্ট দিয়া হয়েছে। যা এই সাইট আ সংরক্ষণ করা আছে। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, আপনি যদি সাল্মনেল্লা (salmonella) ক্রিমি ও কবুতরের শরীরের মাইট কে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন তাহলে কবুতর পালন নিয়ে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না। মনে রাখবেন যে, কবুতরের রোগে না মরে তার থেকে বেশি মরে উল্টাপাল্টা ঔষধ ও রোগ নির্ণয়ের অভাবে। অধিক পরিমানে ও মাত্রার অ্যান্টিবায়টিক এর ব্যাবহারের ফলে, তাই এগুলোর ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন।
৭) ব্রিডিং পেয়ার তৈরিঃ একটা ব্রিডিং জোড়া তৈরি করাটা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। মানে আপনি যদি ভাল ডিম বাচ্চা করতে চান তাহলে আপনাকে অল্প বয়স থেকে তাকে তৈরি করতে হবে। যদিও অনেকেই পূর্ণ বয়স্ক কবুতর কিনতেই বেশি পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি পূর্ণ বয়স্ক কবুতর কিনতে গিয়ে বুড়ো কবুতর আবার না কিনে ফেলেন । এই জন্য নতুন পূর্ণ বয়স্ক কবুতর কিনতে পারেন। তবে জিরো পরের কবুতর কিনলে আপনি তাকে আপনার পরিবেশ ও খাবারের সাথে খাপ খাওয়া তে সুবিধা বেশি। একটা ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন জেন ব্রিডিং জোড়া কে পারতত পক্ষেঅ্যান্টিবায়টিক না দিয়া আর যদিও দিতে হয় মধ্যম বা নিন্ম লেভেল এর অ্যান্টিবায়টিক দিবেন। তা না হলে অর ডিম পারার ক্ষমতা কমে যাবে।
৮) খামারের নিরাপত্তাঃ নিরাপদ খামার তৈরি আদর্শ খামারের পূর্ব শর্ত। খামার গঠনের পর আপনাকে চোর ও অনাখাঙ্খিত আগন্তক প্রতিরোধ করতে হবে। যেমনঃ বাইরের পাখি, বেড়াল, বেজি, কাক ইত্যাদি। আপনার কোন অতিথি কে খামার দেখাতে হলে অবশ্যই খামারের স্যান্ডেল ব্যাবহার করবেন। বাইরের ময়লা যেন আপনার খামারে প্রবেশ না করে। আর অনর্থক কবুতর দের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এ জন্য নিয়মিত জীবাণু নাশক ছিটাতে হবে। হাঁট থেকে কবুতর কেনার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন। আর নতুন কবুতর আনার পর কিছু নিয়ম মেনে তারপরই কেবল খামারে প্রবেশ করাবেন। আর খামারে নেট লাগাতে ভুলবেন না যাতে, মশা, মাছি ও পোকা, মাকড়ের হাঁট থেকে রক্ষা পেতে।
৯) খামারের পরিচর্যাঃ একটা খামারের মূল শত্রু হল,ইদুর, তেলেপোকা ও ধুলা। তাই যেকোন ভাবে এগুলো থেকে আপনার খামার কে মুক্ত রাখতে হবে। আর এরই লক্ষে আপনাকে প্রতি ২-৩ দিন অন্তর জীবাণু নাশক ছিটান, কবুতরের মল পরিস্কার করতে হবে। এর জন্য আপনি ট্রে তে কাগজ বা কাপর দিয়ে রাখতে পারেন। আর খাঁচাতে এক্তুক্রা কাঠ দিতে ভুলবেন না। আর পারলে ছোট একটুকরা কাপর বা চট(বস্থা কেটে) দিলে ভাল হয়। ডিম পারার জন্য হাড়ি দিবেন। আর তা নিয়মিত পরিস্কার করবেন। খাঁচাতে নাম্বার দিবেন, আর খাবার ও পানির পাত্রেও নাম্বার দিতে ভুলবেন না। ডিম পারার পর ডিমের পরিচর্যা করবেন নিয়মিত। কারন ডিমে যদি ৯০% আদ্রতা না থাকে তাহলে বাচ্চা ফুটার জন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিয়মিত ভাবে মাসিক ছক করে, উন্নত মানের ভিটামিন ও মিনারেলস দিবেন, লিভার টনিক দিবেন, ভালমানের খাবার দিবেন আর ২ মাস অন্তর ক্রিমির ঔষধ দিবেন। (মানুষের টা নয়)। সাল্মনেল্লা কোর্স করাবেন প্রতিমাসে। (অ্যান্টিবায়টিক দিয়ে নয়।) প্রতি সপ্তাহে নিজের মত করে গোসলের ব্যাবস্থা করবেন। সপ্তাহে না পারলে ১৫ দিনে বা মাসে একবারের জন্য হলেও এই ব্যাবস্থা করবেন। ৩ মাস অন্তর ধরে উকুন নাশক শ্যাম্পু দিয়ে গোসলের ব্যাবস্থা করবেন। সাধারণত একার পক্ষে কোন খামার পরিচর্যা সম্ভব হয় না। আর এ জন্য বাসার মানুষদের এতে সহযোগিতা নিতে পারেন। অথবা কেয়ার টেকার নিতে পারেন। কারন আপনি হয়ত চাকরি করেন বা ব্যাবসা করেন বা ইস্কুল ও কলেজে পড়েন। তাই হয়ত সময় নাও পেতে পারেন দুপুরে বা অন্য সময়ে যথাযথ ভাবে পরিচর্যা করার। আর এই ওজুহাতে আপনি আপনার খামারের কোন প্রকার গাফলতি করার কোন সুযোগ নেই। কারন একটা খামার কে যেমন লাইন এ আনতে কষ্ট করতে হয়। আর একবার ঠিক হয়ে গেলে আপনাকে এটা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু আবার যদি কোন কারনে লাইনচূত হয় তাহলে তাকে আবার সঠিক পথে আনতে অনেক বেগ পেতে হয়। তাই এব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখবেন। কোন কবুতর অসুস্থ হয়ে অনতিবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যাতে করে অনাখাংকিত পরিস্থিতির মোকাবেলা সম্ভব হয়। আর বাচ্চা যখন বড় হবে ও খাওয়া শিখবে তখন তাদের তাড়াতাড়ি আলাদা করার ব্যাবস্থা করতে হবে। তানাহলে তারা পরবত্তি ডিম বা বাচ্চা কে মেরে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
১০) কবুতরের আচার আচারন লক্ষ করা ও খামারে সময় দেয়াঃ আপনার খামারের অন্যতম সাফল্য নির্ভর করে আপনি যদি আপনার কবুতরের আচার-আচরন ঠিকমত খেয়াল করেন। কারন এক এক কবুতরের আচারন এক এক রকম। তাই যখন এর পরিবর্তন দেখবেন তখনই বুঝবেন এর কোন সমস্যা হয়েছে। আর এর জন্য আপনাকে কিছু সময় কাটাতে হবে খামারে আপনার ভালবাসার কবুতরের পাশে। আর যেটা খুবই জরুরি সেটা হল রোগাক্রান্ত কবুতরের লক্ষণ গুলো ভাল মত লক্ষ করা। তার মধ্যে পায়খানা/ Dropping টা অন্যতম।
১১) ভাল উপদেষ্টা বা খামারের জন্য বন্ধু খুজে নেওয়াঃ একজন মুচি যেমন চায় আরেকজনের জুতা ছিঁড়ুক, একজন ডাক্তার চান বেশি বেশি রোগী আসুক তার চেম্বারে। তেমনি কিছু মানুষ চাই যেন আপনার খামারেও সেই অবস্থা হোক। আর এরই লক্ষে নানা ধরনের এমন সব উপদেশ আপনাকে দিবে যা তিনি নিজেও যে কাজ করেন না। তাই যেকোনো কাজ বা চিকিৎসা বা ঔষধ অথবা ভিটামিন প্রয়োগ করারা আগে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নিবেন। বা দুই একজনের কাছে জিজ্ঞাস করবে। যাতে আপনি অনাখাংকিত ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন।
১২) খামারির কিছু জরুরি সতর্কতাঃ প্রত্যেক খামারিকেই কিছু জরুরি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, আর এগুলো যদি সঠিক ভাবে মেনে চলা হয় তাহলে, আশা করা যাই তিনি সফল ভাবে খামার পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
 যেমনঃ ১) অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের ৩ দিনের মধ্যে খেয়াল করবেন যে পায়খানার রঙ পরিবত্তন হচ্ছে কিনা? যদি না হয় তাহলে ৩ দিন পর অন্য অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করতে হবে।
২) অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের পর অবশ্যই probiotic দিতে হবে। তাহলে আবার ভাল ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে। আর পাতলা পায়খানা, সর্দি ইত্যাদির মত রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে।
৩) অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করবেন না।
৪) চোখের রোগের জন্য কোন চোখের ড্রপ ৫ দিনের বেশি ব্যাবহার করবেন না।
 ৫) ভিটামিন বা কোন ঔষধ দলা বেঁধে গেলে আর ব্যাবহার করবেন না।
৬) ভিটামিন ব্যাবহারের পর যদি হলুদ ধরনের পায়খানা করে, তাহলে ওই ভিটামিন আর ব্যাবহার করবেন না।
৭) কবুতর বমি করলে omidon বা এই ধরনের ঔষধ বেশি ব্যাবহার করবেন না। বা histasin ধরনের ঔষধ কখনও ব্যাবহার করবেন না।
৮) খামার ভিজা বা স্যাঁতসেঁতে রাখবেন না।
৯) ঔষধের গায়ে লেখা নির্দেশনা মত ঔষধ ব্যাবহার করতে যাবেন না।
১০) কবুতর অসুস্থ হলে আগে চালের স্যালাইন দিবেন।
১১) ভিটামিন বা ঔষধ যেন রোদে না রাখা হয় সেটা খেয়াল রাখবেন। বা কোন ঔষধ বা ভিটামিন ১২ ঘণ্টার বেশি রাখবেন না।
১২) যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে নিজেকে দিয়ে বিচার করবেন।যেমনঃ অনেকেই ঠাণ্ডা লাগলে কবুতর কে অ্যান্টিবায়টিক দিতে বলেন।কিন্তু আমাদের জানামতে আমরা কখনও এক্ষেত্রে নিজেদের জন্য অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করি না।
১৩) পানি অবশ্যই ফুটান দিবেন বা নলকূপের টা দিবেন বা ফিল্টার এর টা দিবেন। ১৪) অনর্থক কবুতর কে ধরবেন না। বা ডিম চালার সময় বেশি নারানারি করবেন না এতে ডিমের ভিতরের লিগমেন্ত ছিরে যেতে পারে। পরিশেষে, আপনি আমার এই পর্যন্ত কবুতরের যত রোগ বালাই সম্পর্কিত যত পোস্ট আছে সেগুল পড়েন আর সেই অনুযায়ী মানে চলেন। তাহলে আশা করে আপনার খামারে কোন অসুবিধা হবার সম্ভাবনা নেই। আর যদিও বা হয় তাহলে আশা করি আপনি নিজে একজন বিজ্ঞ লোকের মত নির্ভয়ে তার চিকিৎসা করতে অসুবিধা হবার কথা না। আর এর জন্য চাই আপনার আত্মবিশ্বাস। আর সাধারন কিছু জ্ঞান ও প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি। আপনি যদি এটা চিন্তা করেন যে এটা আমি পারব না তাহলে আর কখনও পারবেন না।

Post a Comment

Previous Post Next Post