ইদানিং বেশিরভাগ খামারি তাদের কবুতরের ঠাণ্ডা,কাসি,শ্বাস কষ্ট, ডায়রিয়া ইত্যাদি সহ নানা সাধারন কিছু অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছেন। যদিও তারা খামার ব্যাবস্থাপনার জন্য যা যা দরকার তাই করছেন কিন্তু তবুও আর থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন না। আর কারন কি? একটু চিন্তা করে দেখার ব্যাপার! কিছু লোক ও উপদেশ কারী প্রায়ই টিস্যুর অনাহত ক্ষতির চিন্তা না করেই তারা অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করে থাকেন। কেও কেও আবার এন্টিবায়োটিক +হারবাল+হমিও+সাধারন ঔষধ একসঙ্গে মিক্স করে ধরে খাওয়ানো নির্দেশ দিয়ে থাকেন। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ও নির্মূল করার জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে একটি দীর্ঘায়িত সময়ের যখন ব্যবহৃত কিছু অ্যান্টিবায়োটিক(Ciprofloxacin, ampicillin এবং kanamycin) এই তিনটি, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (অক্সিজেন এর ভারসাম্যহীনতা) বলে একটি ঘটমান বিষয় পাওয়া গেছে । এই প্রভাবে কোষ রাসায়নিকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন অণু উত্পাদন করতে বার্থ হয় এর ফলে ডিএনএ সৃষ্ট ক্ষতি, এনজাইম এবং ব্যাকটেরিয়ার কোষ ঝিল্লির এছাড়াও শরীরের নিজের ঘর প্রভাবিত করতে পারে । অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নাশের পাশাপাশি ভাল ব্যাকটেরিয়াও প্রাণনাশ হিসাবে অক্সিডাইসিং প্রক্রিয়া নেতিবাচকভাবে শরীরের কোষ অংশে প্রভাবিত করতে পারে। যার ফলে শক্তির উৎপাদন ব্যাহত হয়। এন্টিবায়োটিক প্রতিক্রিয়া হালকা এলার্জি প্রতিক্রিয়া থেকে গুরুতর এবং debilitating প্রতিকূল ঘটনা হতে পারে। এন্টিবায়োটিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোগীর থেকে রোগীকে এবং এন্টিবায়োটিক থেকে এন্টিবায়োটিক অত্যন্ত পরিবর্তনশীল হয়। অ্যান্টিবায়োটিক গুলো সবচেয়ে নির্ধারিত ঔষধ এর মধ্যে প্রতিকূল প্রভাব ও একটি অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া আছে।এন্টিবায়োটিক মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং ঔষধ অবশ্যই রোগীর সহ্য ক্ষমতার শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হত্যা করে বা এর সংক্রমণ থেকে বাচায়। কিন্তু একটি ঠান্ডা বা ফ্লু বা পক্স বা অন্য সকল ভাইরাল সংক্রমণ থেকে কোন প্রকার উপকার করতে পারে না। তারপরও কিছু লোক অজ্ঞানতা বশত অবাধে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করে বা করতে বলে থাকেন। কোন কোন ঔষধের গায়ে লিখা থাকে প্রতিরোধে এই পরিমান ও প্রতিকারে এই পরিমান। আর তাই সেই সুত্র ধরে অধিকাংশ মানুষ তাদের খামারে প্রতিরোধের খেত্রেও সমান তালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করে থাকেন । যার ফল স্বরূপ নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় যা আগেই বলা হয়েছে। নিন্মে অল্প কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সাধারন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ
১) এন্টিবায়োটিক ক্লাসঃ
পেনিসিলিন্ (Penicillins)।
এন্টিবায়োটিক শ্রেণীঃ
পেনিসিলিন(penicillin), আমক্সসিলিন(amoxicillin), এম্পিসিলিন(ampicillin), নাফসিলিন(nafcillin), অক্সাসিলিন(oxacillin) ইত্যাদি
সর্বোচ্চ সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
ফুসকুড়ি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব / বমি, জ্বর, অতি সংবেদনশীলতা (এলার্জি) প্রতিক্রিয়া।
অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল মন্তব্যঃ
রক্তাক্ত মল, anaphylaxis, গুরুতর চামড়া প্রতিক্রিয়া, জ্বর এম্পিসিলিন (ampicillin) মলাশয়-প্রদাহ হতে পারে।
২) এন্টিবায়োটিক ক্লাসঃ
অ্যামিনোগ্লাইকসাইডস (Aminoglycosides )।
এন্টিবায়োটিক শ্রেণীঃ
জেনটাম্যসিন(gentamicin), তব্রাম্যসিন(tobramycin), আয়মিকাসিন(amikacin) ইত্যাদি।
সর্বোচ্চ সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
মূত্রাশয় সম্পর্কীয় (কিডনি) বিষক্রিয়া, শ্রবণ শক্তি হ্রাস, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব/বমি।
অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল মন্তব্যঃ
একাধিক বার ঔষধ প্রয়োগ ও বেশিদিন চিকিৎসার সময়সীমার জন্য বেশী ঝুঁকি, ঘন ঘন ডায়রিয়া,সর্দি ও অ্যালার্জি মূলক সর্দিকাশি হতে পারে।
৩) এন্টিবায়োটিক ক্লাসঃ
ম্যাক্রোলিদেস(Macrolides)।
এন্টিবায়োটিক শ্রেণীঃ
আয়রিথ্রম্যসিন(erythromycin), আয়জিথ্রম্যসিন(azithromycin), ক্লারিথ্রম্যসিন(clarithromycin)ইত্যাদি।
সর্বোচ্চ সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, ক্ষুধামান্দ্য, নার্ভ সমস্যা, বমি বমি ভাব / বমি, স্বাদ পরিবর্তন।
অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল মন্তব্যঃ
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উচ্চ হার, ক্যাপসুল খুলে প্রয়োগ বা খলার পর বিরিতি দেওয়া বিপদ জনক হতে পারে।
৪) এন্টিবায়োটিক ক্লাসঃ
টেঁটরাস্যাইক্লিনস(Tetracyclines)।
এন্টিবায়োটিক শ্রেণীঃ
টেঁটরাস্যাইক্লিন(tetracycline), ডক্সিসাইক্লিন(doxicycline) মিনসাইক্লিন(minocycline) ইত্যাদি।
সর্বোচ্চ সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ বমি বমি ভাব / বমি, পাতলা পায়খানা, ক্ষুধামান্দ্য , পেটে ব্যথা,যকৃত(লিভার) বিষক্রিয়া।
অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল মন্তব্যঃ
ঔষধ ব্যাবহারের পর দীর্ঘায়িত উন্মুক্ত সূর্যালোক বিপদজনক হতে পারে।
৫) এন্টিবায়োটিক ক্লাসঃ
কুইনলনেস(Quinolones)।
এন্টিবায়োটিক শ্রেণীঃ
সিপ্রফ্লক্সাসিন/সিপ্র(Ciprofloxacin/Cipro),লিভফ্লক্সাসিন/লিভাকুইন(Levofloxacin/Levaquin), মক্সিফ্লক্সাসিন/এভিলক্স (moxifloxacin/Avelox), ওফ্লক্সাসিন/ফ্লক্সসিন(ofloxacin Floxin) ইত্যাদি।
সর্বোচ্চ সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ বমি বমি ভাব/বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, মাথা ব্যাথা, ঝিমুনি , নার্ভ সমস্যা, অনিদ্রা, আলোক –সংবেদনশিল, শ্বাস কষ্ট ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে।
অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল মন্তব্যঃ
ঔষধ ব্যাবহারের পর দীর্ঘায়িত উন্মুক্ত সূর্যালোক বিপদজনক হতে পারে।
moxifloxacin পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উচ্চ হার এর সঙ্গে যুক্ত এবং এর প্রতিক্রিয়া সাধারণ কণ্ডরা (tendon )ভাঙ্গন , কিডনি মধ্যে, হার্ট, ফুসফুস ছাড়াইয়া যায়।
৬) এন্টিবায়োটিক ক্লাসঃ
বিবিধ (Miscellaneous)।
এন্টিবায়োটিক শ্রেণীঃ
মেট্রনিডাযল(metronidazole) ইত্যাদি।
সর্বোচ্চ সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
বমি বমি ভাব / বমি, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যাথা, যোনি candidiasis, ধাতব স্বাদ ইত্যাদি।
অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল মন্তব্যঃ
মিলিত ব্যবহার পাকস্থলী সংকোচন হতে পারে। চিকিত্সা সময় এবং ৩ দিনের জন্য এলকোহল বা হোমিও ঔষধ ব্যবহার এড়ানো উচিৎ মাথা ব্যাথা; প্রস্রাব লাল বাদামী রং হতে পারে।
এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ এর পর কিছু ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যেমন প্রবায়টিক প্রদান,বেসি পানি ও স্যালাইন দেওয়া ইত্যাদি। হারবাল ও হোমিও প্রাথমিক ও প্রিতিরধ মূলক চিকিৎসার জন্য ব্যাবহার করা হয়। রোগের আধিক্য হলে অবশ্যই এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা উচিৎ। আর এন্টিবায়োটিক তখনি কেবল প্রয়োগ করা উচিৎ যখন কবুতর বা পাখি খাওয়া বন্ধ বা বেশী পরিমান ঝিমানি ভাব হয়। তবে এই ব্যাপারে বেশী দেরি করা যাবে না। আর সবচেয়ে ভাল প্রতিরোধ । তাই যথাযথ এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ প্রয়োগ এর মাধ্যমে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
Post a Comment