ফ্রেঞ্চ মোল্ট (French Molt):
পাখিদের ক্ষেত্রে মোল্টিঙ বা পালক ঝরে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সকল পাখিদেরই একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর কিছু পালক পরে গিয়ে আবার নতুন পালক গজায়। খাঁচায় পোষা টিয়া প্রজাতির (বিশেষ করে বাজেরিগার, লাভ বার্ড, ককাটিয়েল) পাখিদের ক্ষেত্রে যখন অস্বাভাবিক হারে পালক ঝরে পরে তখন তাকে ফ্রেঞ্চ মোল্ট (French Molt) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ফ্রান্স থেকে জার্মানিতে আমদানিকৃত কিছু বাচ্চা বাজেরিগার পাখির মধ্যে সর্ব প্রথম এই রোগটি দেখা যাওয়ায় এর নামকরন করা হয় ফ্রেঞ্চ মোল্ট (French Molt)।
ফ্রেঞ্চ মোল্টের লক্ষনঃ
ফ্রেঞ্চ মোল্টে আক্রান্ত পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ বয়সের পাখিদের অথবা যেসব পাখি নতুন উড়তে শিখেছে তাদের মধ্যে অতিরিক্ত হারে বিশেষ করে ডানা এবং লেজের পালক ঝরে পরার প্রবনতা দেখা যায়। পালক ঝরার সংখ্যার উপর নির্ভর করে রোগটি কতটা তীব্র। মধ্যম গুরুতর অবস্থায় পাখিদের উড়ার জন্য অপরিহার্য পালক ( যা কিনা “সেকেন্ডারি ফ্লাইট ফেদার” নামে পরিচিত ) ঝরে পরে। আর সবচেয়ে গুরুতর ভাবে আক্রান্ত পাখিদের পুরো শরীরের পালক-ই ঝরে যায়। পালক ঝরে যাওয়ার কারনে এসব পাখিরা উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
ফ্রেঞ্চ মোল্টে আক্রান্ত পাখির পালক ঝরে পরার একটি নির্দিষ্ট ধরন আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাখির উভয় ডানার মধ্যম সারির সকল ফ্লাইট ফেদারগুলো একবারে ঝরে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র প্রাথমিক ফ্লাইট ফেদারটি থেকে যায় কারন এই পালক গুলিই সবার প্রথমে গজায় এবং পরিপক্ক (mature)হয়। ফ্রেঞ্চ মোল্টের কারনে অপরিপক্ক পালকগুলি বেশী আক্রান্ত হয় এবং ঝরে পরা পালকের গোঁড়ার দিকে রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায়।
আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাখির চামড়ায় কোন ধরণের পরিবর্তন দেখা যায় না। আক্রান্ত পাখির পালকগুলির বৃদ্ধি ঠিকভাবে হয়না এবং পালকের মধ্যে যে রক্তনালী থাকে তাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। যার কারনে ফ্লাইট ফেদারের বৃদ্ধির হার কমে যায়।
ফ্রেঞ্চ মোল্ট বিক্ষিপ্ত ভাবে আক্রমন করে। এই রোগ হঠাৎ করেই আপনার পক্ষীশালায় (এভাইয়ারি) প্রবেশ করে আপনার পাখির ছানাদের আক্রান্ত করতে পারে। এমনও হতে দেখায় যায় যে একই পাখির কিছু ছানা ফ্রেঞ্চ মোল্টে আক্রান্ত হয়েছে আর কিছু সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। এছাড়া এই রোগের তীব্রতা পাখিভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত যেসব জোড়া ২ বারের বেশী বাচ্চা বড় করেছে তাদের বাচ্চাদের ফ্রেঞ্চ মোল্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে।
Post a Comment