পলিওমা(Polyoma) নামক এক ধরনের ভাইরাসের কারনে পাখি ফ্রেঞ্চ মোল্টে আক্রান্ত হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সব পাখিকে অতিরিক্ত ব্রিডিং করানো হয়, অপুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লালন পালন করা হয় তাদের মধ্যে ফ্রেঞ্চ মোল্টের অনরুপ লক্ষন দেখা যায়, এসব কারনেই পাখি খুবই দুর্বল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার কারনে পাখি খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি ফ্রেঞ্চ মোল্ট সাধারণত দুই ধরনের। ১। পলিওমা ভাইরাসের কারনে ফ্রেঞ্চ মোল্ট ২। শারীরিক অপুষ্টি বা দুর্বলতা জনিত ফ্রেঞ্চ মোল্ট।
ফ্রেঞ্চ মোল্ট (French Molt)
ফ্রেঞ্চ মোল্ট (French Molt)
পলিওমা ভাইরাসের কারনে ফ্রেঞ্চ মোল্ট
কারন এবং সংক্রমণঃ পলিওমা ভাইরাস পাপোভা ভাইরাস(Papovavirus) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই রোগাক্রান্ত অল্পবয়স্ক পাখির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এরা সাধারণত দুই থেকে দশ দিনের মধ্যেই মারা যায়। প্রকৃতি থেকে এই ভাইরাস নির্মূল করা খুবই কঠিন এবং এগুলো খুব সহজেই আমাদের হাত, কাপড় অথবা যখন বাচ্চা পাখিকে হাতে খাওয়ানো হয়(হ্যান্ড ফিডিং) তখন সংক্রমিত হতে পারে। আর পাখিদের মধ্যে রোগাক্রান্ত পাখির পালকের ধূলিকণা, আক্রান্ত মা পাখি যখন বাচ্চাদের খাওয়ায় এবং শ্লেষ্মা থেকে এই রোগ ছড়ায়।
এই ভাইরাস কি করে?
এই ভাইরাস পাখির হৃৎপিণ্ডের আকার স্বাভাবিক আকারের থেকে বড় করে এবং হৃৎপিণ্ড, লিভার, পিত্ত, অন্ত্র এবং চামড়ার নীচে রক্তক্ষরণ ঘটায়।
প্রতিকার/প্রতিরোধঃ
উন্নত বিশ্বে পলিওমা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন পাওয়া গেলেও এটার কার্যকারিতা এবং উপযোগিতা একটি বিতর্কিত বিষয়। যদিও অনেক ভেটেরনারি ডাক্তার অল্পবয়স্ক এবং বয়স্ক পাখিকে ভ্যাক্সিন দিতে সুপারিশ করেন কিন্তু অনেকে বলেন এই ভ্যাক্সিন কার্যকর হতে অনেক সময় নেয় আর এই সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবেই বাচ্চা পাখির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরী হয় অথবা ভাইরাস পাখির শরীরকে পুরোপুরি আক্রান্ত করে ফেলে। এছাড়াও এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই পাখির শরীরের পলিওমা ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। ভেরিফিকেশনের জন্য গ্রামস্টাইন টেস্ট ( Gramstain test) এবং অন্যান্য টেস্ট (যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সম্ভব নয়) করে নিতে হবে।
পূর্বাভাস/ফলাফলঃ কিছু রোগাক্রান্ত পাখি সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই মারা যায়, কিছু পাখি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে কিন্তু পালকের বিন্যাস ঠিক থাকে না। কিছু পাখি আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে পায় কিছু আবার আমৃত্যু এই রোগের জীবাণু শরীরে বহন করে বেড়ায়। কোন কোন সূত্র অনুযায়ী এই রোগাক্রান্ত পাখির মৃত্যুর হার শতকরা ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ।
শারীরিক অপুষ্টি বা দুর্বলতা জনিত ফ্রেঞ্চ মোল্ট
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক অপুষ্টি বা দুর্বলতা জনিত কারনে পাখি ফ্রেঞ্চ মোল্টে আক্রান্ত হয়।
কারন এবং সংক্রমণঃ নিম্নোক্ত কারণ গুলির উপর পাখি ফ্রেঞ্চ মোল্টে আক্রান্ত হওয়া বা তীব্রতা নির্ভর করেঃ
১। অতিরিক্ত ব্রিডিং এর চাপ, পাখি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই অথবা প্রজনন ঋতুর বাহিরে ব্রিডিং করানো ।
২। পক্ষীশালার (এভাইয়ারির) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ঘিঞ্জি/আটশাট পক্ষীশালা, পাখির পর্যাপ্ত নড়াচড়া/উড়ার জায়গা না থাকা
৩। আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে আসলে, পাখির খাদ্যে যথাযথ পুষ্টির ঘাটতি বা পরিবেশগত চাপে
৪। পাখির আগে প্রজন্মের কারো ফ্রেঞ্চ মোল্ট আক্রান্ত হলে।
৫। কৃত্রিম আলোর সাহায্যে পাখির প্রজনন মৌসুমের পূর্বেই অথবা পরেই আবার ব্রিডিং করানো
শারীরিক অপুষ্টি বা দুর্বলতা জনিত ফ্রেঞ্চ মোল্ট ছোঁয়াচে নয়। সুতরাং এ ধরণের রোগাক্রান্ত পাখিকে অন্য পাখি থেকে আলাদা রাখার প্রয়োজন নেই।
এটি কি করে?
পাখির পালক বিনষ্ট করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রান্ত করে।
কিভাবে চিনবেন?
পাখির পালক গুলি এলোমেলো ও অস্বাভাবিক, অপুষ্ট শরীর, ধীর গতির শারীরিক বৃদ্ধি এবং খুব সহজেই/ঘন ঘন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
প্রতিকারঃ উপরে বর্ণিত কারণগুলো এড়িয়ে চলুন। পাখির জন্য প্রাকৃতিক ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্যে নিশ্চিত করুন। পাখি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই অথবা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্রিডিং করানো যাবে না। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পাখির খাঁচার ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং আলো বাতাস নিশ্চিত করুন।
পূর্বাভাস/ফলাফলঃ দুর্বলতার কারনে কিছু পাখি ছোট থাকতেই মারা যায়। কিছু পাখি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে কিন্তু পালকের বিন্যাস ঠিক নাও থাকতে পারে। কিছু পাখি আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে পায়। যদি সঠিক যত্ন নিশ্চিত করা যায় তাহলে এই ধরনের পাখির মৃত্যুর হার খুবই কম।
إرسال تعليق