কবুতর পালন শুরু করার আগে কবুতরের সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে
কবুতর পালন করার জন্য অতিরিক্ত কোনো খরচ হয় না। কবুতরকে সহজেই পোষ মানানো যায়। বাড়ির যেকোনো কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ কিংবা কার্নিশের মতোছোটবা অল্প জায়গাতে ও কবুতর পালন করা যায়। এমনকি ছাদের সঙ্গে ঝুড়ি ঝুলিয়েও কবুতর পালন করা সম্ভব।কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং শক্তি বর্ধক। অন্যান্য পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। ফলে আমিষের পাশাপাশি বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্যেও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে।
বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই অল্প সময়ে লাভ জনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছেন। কবুতর সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাস করে। প্রতি জোড়ায় একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী কবুতর থাকে। এরা ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা প্রজনন করে থাকে। ডিম পাড়ার পর স্ত্রী ও পুরুষউভয় কবুতরই পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দেয়। কবুতরের কোনো জোড়া হঠাৎ ভেঙে গেলে সেই জোড়া তৈরি করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। নতুন জোড়া তৈরি করার জন্য স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরকেএকঘরে কিছুদিন রাখতে হয়।
কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধা ও বাসস্থান
ভালো বাসস্থান কবুতর পালনের জন্য খুবই দরকারী। উত্তম নিষ্কাশন, পর্যাপ্ত সূর্যের আলোএবং বাতাস চলাচল আছে এরকম উঁচু এবং বালুময় মাটিতে কবুতরের ঘর করতে হয়। যা খামারির আবাসস্থল থেকে ২০০ থেকে ৩০০ ফুট দুরে ও দক্ষিণমূখী হওয়া উচিত।
মাটি থেকে ঘরের উচ্চতা ২০ থেকে ২৪ ফুট এবং খাচার উচ্চতা ৮ থেকে ১০ ফুট হওয়া ভালো।
একটি খামারের জন্য ৩০ থেকে ৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ। কবুতরের খোপ ২ বা ৩ তলা বিশিষ্ট করা যায়। খোপের মাপ প্রতিজোড়া ছোটআকারের কবুতরের জন্য ৩০ সে. মি. x ৩০ সে.মি. x ২০ সে.মি. এবং বড় আকারের কবুতরের জন্য ৫০ সে. মি. x ৫৫ সে.মি. x ৩০ সে.মি.।
অল্প খরচে সহজে ঘর তৈরি এবং স্থানান্তরযোগ্য যা কাঠ, টিন, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা যায়। খামারের ভিতরে নরম, শুষ্ক খড়-কুটা রেখে দিলে তারা ঠোঁটেকরে নিয়ে নিজেরাই বাসা তৈরি করে নেয়।
ডিম পাড়ার বাসা তৈরির জন্য ধানের খড়, শুকনো ঘাস, কচি ঘাসের ডগাজাতীয় উপাদান দরকার হয়। খোপের ভিতর মাটির সরা বসিয়ে রাখলে কবুতর সরাতে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায়।
সাধারণত একটি ভালো জাতের কবুতর বছরে ১২ জোড়া ডিম দিতে সক্ষম। এই ডিমগুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়।
একটি পূণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিম দেবার উপযোগী হতে ৫ থেকে ৬ মাস মসয় লাগে।
কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেই বাচ্চা সাধারণ নিয়মে ফুটে থাকে। এই বাচ্চাই ৫ থেকে ৬ মাস পরে নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু করে। ফলে কবুতর বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের সংখ্যা।
দেশি কবুতরের মাংস প্রচুর চাহিদা রয়েছে। একটি খুব ভালো প্রজাতির কবুতর লালন করলে ১ বছরের মধ্যে সেই জোড়া থেকে কয়েক জোড়া কবুতর পাওয়া খুব বেশি আর্শ্চযজনক বিষয় নয়।
কবুতরের প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও ডিম ফুটানো
হাঁস-মুরগির মতোযে কোনো মর্দা কবুতর মাদী কবুতরের সঙ্গে সহজে জোড়া বাঁধে না। এদেরকে একসঙ্গে ১ সপ্তাহ রাখলে জোড়া বাঁধে।
ডিম পাড়ার পর থেকে মর্দা ও মাদী কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দিতে শুরু করে। মাদী কবুতর প্রায় বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডিমে তা দেয় এবং বাকী সময়টুকু অর্থাৎ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মর্দা কবুতর তা দিয়ে থাকে। তা দেয়ার পঞ্চম দিনেই ডিম পরীক্ষা করে উর্বর বা অনুর্বর ডিম চেনা যায়।
আলোরসামনে ধরলে উর্বর ডিমের ভিতর রক্তনালী দেখা যায়। কিন্তু অনুর্বর ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের ভিতর স্বচ্ছ দেখাবে।
জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৬ দিন বয়স পর্যন্ত কবুতরের বাচ্চার ক্রমবর্ধমান অবস্থা থাকে। প্রথমে সারা দেহ হলুদ পাতলা বর্ণের লোম দিয়ে ঢাকা থাকে।
এই সময় নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়। প্রায় ৪-৫ দিন পর বাচ্চার চোখখোলেবা ফুটে। ১৫ দিনে সমস্ত শরীর পালকে ছেয়ে যায়। প্রায় ১৯-২০ দিনে দু'টোডানা এবং লেজ পূর্ণতা লাভ করে ও ঠোঁটস্বাভাবিক হয়। এই ভাবে ২৬-২৮ দিনে কবুতরের বাচ্চা পূর্ণতা লাভ করে।
পিজিয়ন মিল্ক
কবুতরের খাদ্যথলিতে পিজিয়ন মিল্ক উৎপাদিত হয়। কবুতরের ছানার জন্য একটি আদর্শ খাবার।
কবুতরের খাবার
হাঁস-মুরগির মতোকবুতরের খাবারে শ্বেতসার, চর্বি, আমিষ, খনিজ, ভিটামিন প্রভৃতি থাকা প্রয়োজন। কবুতর তার দেহের প্রয়োজন এবং আকার অনুযায়ী খাবার খায়। প্রতিটি কবুতর দৈনিক প্রায় ৩০-৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার খেয়ে থাকে। প্রধানত গম, মটর, খেশারী, ভুট্টা, সরিষা, যব, চাল, ধান, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেয়ে থাকে।
কবুতরের খাদ্য তালিকা
বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিচে দেওয়া খাদ্য মিশ্রণ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয় যাবে।
খাদ্য উপাদান ও পরিমাণ : ভুট্টা ৩৫%, মটর ২০%, গম ৩০%, ঝিনুকের গুঁড়া/চুনাপাথর চূর্ণ/অস্থিচূর্ণ ০৭%, ভিটামিন/এমাইনো এসিড প্রিমিক্স ০৭% ও লবণ ০১%।
এর সঙ্গে কবুতরের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। এক পাত্রে কবুতরের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও অন্য পাত্রে প্রয়োজন মতোপরিষ্কার ও বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানি রাখতে হবে।
কবুতরের শারীরক তথ্যাদি
* দেহের তাপমাত্রা = ৩৮.৮-৪০০ সে
* দৈহিক ওজন = (ক) হালকা জাতঃ ৪০০-৪৫০ গ্রাম, (খ) ভারী জাতঃ ৪৫০-৫০০ গ্রাম
* পানি পান = (ক) শীতকালঃ ৩০-৬০ মিলি প্রতিদিন, (খ) গ্রীষ্মকালঃ ৬০-১০০ মিলি প্রতিদিন
* খাদ্য গ্রহণ = ৩০-৬০ গ্রাম প্রতিদিন (গড়)
শীতে কবুতরের খুব রোগব্যাধি হয়ে থাকে। এ জন্য শীতকালে ঘর বাতাস মুক্ত রাখতে হবে। রাতে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। ঘর শুকনো এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের বাতি নেভানোর আগে কবুতর এর খাঁচা থেকে খাবার ও পানির পাত্র বের করে রাখতে হবে।
সকালে সাধারণত ঠাণ্ডা বেশি থাকে। তাই দেরিতে ঘরে প্রবেশ করতে হবে এবং খাবার দিতে হবে। কবুতরের ঘরের জন্য পারলে আলাদা পোশাক পরিধান করতে হবে।
রোগেরলক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ দেওয়া হল।
রোগেরনাম : সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস।
কারণ : সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম।
লক্ষণ : শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো, ফেনা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়। দেহ ক্রমাগত শুকিয়েযায়। ভারসাম্য হীনতা ও পক্ষাঘাত দেখা দেয়।
চিকিৎসা : এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। আর ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।
প্রতিরোধ : ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
রোগেরনাম : পাসটিউরেলা মালটোসিডা
লক্ষণ : ডাইরিয়া, জ্বর, কোনো লক্ষণ ছাড়াই ২৪-৪৮ ঘন্টা মধ্যে কবুতর মারা যায়।
চিকিৎসা : এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। সঙ্গে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।
প্রতিরোধ : ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
রোগেরনাম : করাইজা অথবা আউল'স হেড।
কারণ : হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা।
লক্ষণ : সর্দি, চোখের পাতা ফুলে প্যাঁচার মাথার মতোদেখায়। চোখদিয়ে (muco-purulent) পদার্থ বের হয়।
চিকিৎসা : অ্যান্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। সঙ্গে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।
প্রতিরোধ : ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
রোগেরনাম : মাইকোপ্লাজমোসিস।
কারণ : মাইকোপ্লাজমা কলাম্বিনাম।
লক্ষণ : সর্দি, চোখও নাক দিয়ে প্রথমে পানি এবং পরে muco-purulent পদার্থ নির্গত হয়। মুখ ও কন্ঠ অত্যধিক প্রদাহে স্ফীত থাকে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়।
চিকিৎসা : টিয়ামুলিন, টাইলোসিন এনরোফ্লুক্সসিন, স্পাইরামাইসিন, লিনকোমাইসিন গ্রুপের অষুধ।
প্রতিরোধ : ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
রোগেরনাম : ক্ল্যামাইডিওসিস অথবা অরনিথোসিস।
কারণ : ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি।
লক্ষণ : চোখও নাক দিয়ে পানি পড়ে। স্বাস্থ্যে অবনতি ঘটে। আর রোগভোগের পর মারা যায়।
চিকিৎসা : ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন, টাইলোসিন, লিনকোমাইসিন, স্পাইরামাইসিন ইত্যাদি
প্রতিরোধ : ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
রোগেরনাম : নিউক্যাসল অথবা প্যারামিক্সো ভাইরাস-১।
কারণ : প্যারামিক্সো ভাইরাস টাইপ-১।
লক্ষণ : সবুজ রংয়ের ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মুখ হা করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা, পাখা ও পায়ের পক্ষাঘাত ইত্যাদি।
চিকিৎসা : এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন, ইমিউনো স্টিমুলেটর।
প্রতিরোধ : জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। টিকা প্রদান করতে হবে।
রোগেরনাম : ডিফথেরো স্মল পক্স (বসন্ত রোগ)।
কারণ : বোরেলিয়া কলাম্বরি ভাইরাস।
লক্ষণ : পালকহীন ত্বক বিশেষ করে চোখ, ঠোঁটেরচারপাশে এবং পায়ে ক্ষত বা পক্স দেখা যায়।
চিকিৎসা : অ্যান্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন এ এবং সি, ইমিউনো স্টিমুলেটর, টপিক্যাল আইওডিন।
প্রতিরোধ : জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
রোগেরনাম : পরজীবী রোগ
কারণ : আইমেরিয়া, এসকারিস, ক্যাপিলারিয়া, ট্রাইকোমোনা।
লক্ষণ : দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, শুকিয়েযাওয়া, ডাইরিয়া (মলে রক্ত থাকে ককসিডিয়া), পুষ্টিহীনতা ও অবশেষে মৃত্যু ঘটে।
চিকিৎসা : কৃমিনাশক, ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স, এমাইনো এসিড।
প্রতিরোধ : জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
অপুষ্টিজনিত ও বিপাকীয় রোগ
ভিটামিন-এ এর ঘাটতি : দেহে ক্ষত হয়, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় এবং অক্ষিঝিল্লির প্রদাহ দেখা দেয়। ক্ষুধা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধি ও পালকের গঠণ ব্যাহত হয়। উৎপাদ ও ডিম তা দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
নিয়মিত ভিটামিন, প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান অথবা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে।
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি : অস্থি নরম ও বাঁকা হয়ে যায়, ডিম উৎপাদন ও তা দেওয়ার ক্ষমতা কমে।
ভিটামিন ডি ও মিনারেল প্রিমিক্স প্রদান, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (কডলিভার অয়েল, ফিস মিল) প্রদান করতে হবে।
ভিটামিন ই : এনসেফালোম্যালাশিয়া রোগহয়, পক্ষাঘাতের ফলে চলতে অসঙ্গতি দেখা দেয়। বুক ও পেটের নিচে তরল পদার্থ জমে, ইডিমা হয়। ডিমের উর্বরতা কমে যায়।
সেলিনিয়ামসহ ভিটামিন ই প্রদান করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার (শস্য দানা, গম, চাউলে কুড়া, শুটকিমাছ) খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন কে : রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
ভিটামিন কে প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (সবুজ শাকসবজি ও মাছের গুঁড়া)।
ভিটামিন বি ১ : পা, ডানা ও ঘাড়ে পক্ষাঘাত হয়। ঘাড়ের পক্ষাঘাতের ফলে ঘাড় পেছন দিকে করে আকাশের দিকে মুখ করে থাকে, চলনে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। ভিটামিন বি ১ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান (চাউলের কুড়া, গমের গুঁড়া, শাক সবজি)
ভিটামিন বি ২ : ছানার পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। পরে নখ বা আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। ছানার দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
ভিটামিন বি ২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (সবুজ শাক সবজি, ছোলা, খৈল, আলফা-আলফা, ঈষ্ট)
ভিটামিন বি ৬ : ক্ষুধামন্দ্যা দেখা দেয়। ছানার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্যারালাইসিস ও পেরোসিসহতে পারে। ভিটামিন বি ৬ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (শস্য, মাছের গুঁড়া, আলফা-আলফা, ঈষ্ট ইত্যাদি)
ভিটামিন বি ১২ : বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ডিমের উর্বরতা হ্রাস পায়। ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, মাংস ফিসমিল ইত্যাদি)
ফলিক এসিড : রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও পালক কম গজায়। ০.০১৪ মিগ্রা প্রতিদিনের প্রয়োজন। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও সাথে ম্যানগানিজ (সহ) প্রদান করতে হবে। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, ঈষ্ট)।
ম্যানটোথেনিক এসিড : বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও চর্ম রোগহয়। পা ও চোখের চারিপাশে নেক্রোসিস হয়। ডিমের উর্বরতা হ্রাস। ০.৩৬ মিগ্রা প্রতিদিনের প্রয়োজন। প্যানটোথেনিক এসিড সমৃদ্ধ ভিটামিন প্রদান (চীনাবাদাম, আখের গুড়, ঈষ্ট, চাউলের কুড়া, গমের ভূষি ইত্যাদি)
বায়োটিন : পেরোসিস,ডিমের উর্বরতা হ্রাস ও চর্ম প্রদাহ দেখা দেয়। ০.০০২ মিগ্রা প্রতিদিনের প্রয়োজন। বায়োটিন সমৃদ্ধ ভিটামিন ও খাদ্য প্রদান।
খনিজ পদার্থ (সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন,ম্যানগানিজ, কপার এন্ড কোবাল্ট, আয়রন : হাড় গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ডিমের খোসা নরম হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পেরোসিসও প্যারালাইসিস হয়।
পাখিকে নিয়মিত ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও খাদ্য প্রদান করতে হবে।
এমাইনোএসিড
আমিষ বিভিন্ন প্রকার এমাইনো এসিড সরবরাহ করে যা দেহ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক। সুতরাং পাখিকে এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য (শুটকি মাছের গুড়া, সরিষা, তিল ও চীনাবাদামের খৈল) সরবরাহ করতে হবে।
কবুতর সংগ্রহের উপায়
প্রতি শুক্রবার ঢাকার গুলিস্তানের কাপ্তানবাজারে কবুতর এবং কবুতরের খাবারের বিশাল হাট বসে। এখানে দেশি-বিদেশি প্রায় সব ধরনের কবুতর পাওয়া যায়।
এ ছাড়া জিঞ্জিরায় শুক্রবার, ঢাকার পাগলায় শনিবার হাট বসে। কাপ্তানবাজার এবং কাঁটাবনে কিছু স্থায়ী দোকান আছে যেখানে সারা সপ্তাহ কবুতর ও খাবার পাওয়া যায়।
ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বিদেশি ও দামি কবুতর এর হাট বসে। সোশ্যাল নেটওর্য়াক এর মাধ্যমে এখন কোথায় খামারি আছে কেমন দাম এগুলো তথ্য পাওয়া যায়। আবার হাট থেকে খামারিদের মধ্যে ভালো জানাশুনা হয়ে থাকে।
সারাদেশে এখন অনেক খামারি আছে যাদের মধ্যে সবসময় যোগাযোগ থাকে। বেকারত্ব ও চাকুরীর পাশাপাশি পালন করতে পারেন শখের কবুতর। সোশাল নেটওয়ার্ক-এর মাধ্যমেও সংগ্রহ করা যায় কবুতর।
কবুতর নিয়ে ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের নাম পাখি এবং কবুতর (update tips) Bangladesh Pigeon Sales Center. Fancy Pigeon Fan Club.
বিভিন্ন জাতের কবুতর এবং মূল্য (বাজার ভেদে পরিবর্তনীয়) ।
তথ্য সূত্র : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, খামারিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ।
إرسال تعليق